📍 সান্দাকফু হল পূর্ব হিমালয়ের একটি শ্বাসরুদ্ধকর গন্তব্য, যা বিশ্বের চারটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গের মনোরম দৃশ্যের জন্য পরিচিত: এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোটসে এবং মাকালু। এখানে একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা রয়েছে যা আপনাকে সান্দাকফু ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে, আপনি ট্রেকিং করতে যাচ্ছেন বা শুধু দৃশ্য উপভোগ করতে যাচ্ছেন।
Sandakphu
১. সান্দাকফু সম্পর্কে
অবস্থান: সান্দাকফু ভারত এবং নেপালের সীমান্তে সিংগালীলা রিজ-এ অবস্থিত।
উচ্চতা: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৬৩৬ মিটার (১১,৯২৯ ফুট), পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ স্থান।
বিশেষত্ব: “স্লিপিং বুদ্ধা” (কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশ্রেণী) সহ চূড়াগুলির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, নেপাল-ভারতীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণ এবং হিমালয়ের অনন্য উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ।
২. ভ্রমণের সেরা সময়
বসন্ত (মার্চ থেকে মে): এই সময়ে রডোডেনড্রন ফুলে ঢাকা থাকে পুরো ট্রেইল।
শরৎ (অক্টোবর থেকে নভেম্বর): পরিষ্কার আকাশে শৃঙ্গগুলির সুন্দর দৃশ্য পাওয়া যায়।
শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): তুষারপাতের সাথে পর্বতের সৌন্দর্য বেড়ে যায়, তবে শীতের কারণে এটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি): তুষারপাতের সাথে পর্বতের সৌন্দর্য বেড়ে যায়, তবে শীতের কারণে এটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে
৩. সান্দাকফুতে পৌঁছানোর উপায়
বিমান পথে: নিকটবর্তী বিমানবন্দর হলো সিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দর, যা ট্রেকের শুরুর পয়েন্ট মানেভঞ্জন থেকে প্রায় ১৩০ কিমি দূরে।
রেল পথে: নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) প্রধান নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন, প্রায় ১২৫ কিমি দূরে।
সড়ক পথে: এনজেপি বা বাগডোগরা থেকে মানেভঞ্জন পর্যন্ত শেয়ার করা জিপ সহজেই পাওয়া যায়।
৪. ট্রেকিং রুট
সান্দাকফু ট্রেক ভারতের অন্যতম সুন্দর ট্রেক, যা মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ট্রেকটি আপনার ফিটনেস অনুযায়ী ৪-৫ দিনে সম্পন্ন করা যায়।
দিন ১: মানেভঞ্জন থেকে টুমলিং (১১ কিমি)
দিন ২: টুমলিং থেকে কালিপোখরি (১৩ কিমি)
দিন ৩: কালিপোখরি থেকে সান্দাকফু (৬ কিমি)
দিন ৪: সান্দাকফু থেকে শ্রীখোলা (গুরদুম হয়ে) (১৬ কিমি) – এটি ট্রেকের শেষ পথ।
অন্যদিকে, যদি ট্রেকিং না করতে চান, তাহলে ল্যান্ড রোভার ভাড়া করে মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু পৌঁছানো যায়, তবে রাস্তা বেশ কঠিন।
৫. প্রয়োজনীয় পারমিট
সিংগালীলা জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের জন্য একটি পারমিটের প্রয়োজন হয়:
ফি: ভারতীয়দের জন্য ₹১০০, বিদেশীদের জন্য বেশি।
কোথায় পাওয়া যাবে: সাধারণত মানেভঞ্জন থেকে পারমিট সংগ্রহ করা যায়।
৬. আবাসনের ব্যবস্থা
লজ এবং টি হাউস: টুমলিং, কালিপোখরি, সান্দাকফু, এবং গুরদুমে অনেক সাধারণ আবাসন ব্যবস্থা পাওয়া যায়।
বুকিং: শীতকালীন সময়ে আগে থেকে বুকিং করা ভাল, কারণ এই এলাকায় রুম সীমিত।
ক্যাম্পিং: সিংগালীলা জাতীয় উদ্যানের ভিতরে ক্যাম্পিং নিষিদ্ধ, তাই নির্দিষ্ট লজেই থাকতে হয়।
৭. প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
পোশাক: গরম পোশাক, ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট, গ্লাভস, টুপি, এবং শক্তিশালী ট্রেকিং বুট।
ট্রেকিং সরঞ্জাম: ট্রেকিং পোল, হেডল্যাম্প এবং রেইন কভার।
খাবার এবং পানি: যদিও টি হাউস গুলোতে খাবার পাওয়া যায়, সাথে খাবার এবং পানির বোতল রাখা উচিত।
প্রথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী: একটি ছোট ফার্স্ট এইড কিট, প্রয়োজনীয় ঔষধ, সানস্ক্রিন এবং আইডি প্রুফ।
৮. ট্রেকের জন্য কিছু টিপস
উচ্চতা জনিত সমস্যা: সান্দাকফু উচ্চতায় অবস্থিত, তাই ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন এবং হাইড্রেটেড থাকুন।
আবহাওয়া: হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকুন, বিশেষ করে শীতকালে।
বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত, বিশেষ করে রাতে; একটি পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা ভাল।
৯. করার মতো কাজ
ফটোগ্রাফি: “স্লিপিং বুদ্ধা” রেঞ্জের ছবি তোলা, সান্দাকফুর সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করা।
বার্ডওয়াচিং: সিংগালীলা জাতীয় উদ্যানে অনেক ধরনের পাখি পাওয়া যায়, যেমন লাল পান্ডা এবং হিমালয়ের মনাল।
স্থানীয় সংস্কৃতি দেখা: টুমলিং এবং সান্দাকফুতে নেপালি ও তিব্বতি সংস্কৃতির সংমিশ্রণ অনুভব করা যায়।
১০. দায়িত্বশীল ভ্রমণ
পরিবেশ রক্ষা: আবর্জনা না ফেলে পরিবেশের প্রতি সম্মান জানানো।
সংস্কৃতির সম্মান: বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকায় স্থানীয়দের প্রতি সম্মান এবং ভদ্রতা বজায় রাখা।
সান্দাকফুতে আপনার ভ্রমণ উপভোগ করুন! এটি একটি মনোমুগ্ধকর, চ্যালেঞ্জিং এবং অবিস্মরণীয় হিমালয়ান অভিজ্ঞতা।